ডেটলাইন দুর্গাপুর,১৬ জুনঃ ‘বকরি-ঈদ’ হল বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি পবিত্র বার্ষিক উৎসব, যা ‘কোরবানি’ বা ‘ ত্যাগের উৎসব’ নামেও পরিচিত। ঈদুল আযহা আল্লাহ’র কাছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর পুত্রের আত্মত্যাগের কাহিনীকে স্মরণ করেই প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে। কাহিনী অনুসারে,আল্লাহ ইব্রাহিমকে স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে তার পুত্রকে কোরবানি দিয়ে ঈমানের পরীক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দেন। ইব্রাহীম তার ছেলেকে আল্লাহর নির্দেশের কথা জানান। শয়তান ইব্রাহিমকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল,কিন্তু সে তাকে তাড়ানোর জন্য পাথর নিক্ষেপ করেছিল। কোরবানির সময় ছেলের মুখ না দেখার জন্য ইব্রাহিম চোখ বেঁধে ফেলেন। ইব্রাহিম যখন তার ছেলেকে কোরবানি দিতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই আল্লাহ হস্তক্ষেপ করেন। আল্লাহ প্রকাশ করলেন যে, কোরবানি ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়েছে এবং তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই মহান আত্মত্যাগের কাহিনী কে প্রতি বছর স্মরণ করে আসছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে শহর দুর্গাপুরেও মুসলিম ধর্মের মানুষরা এই উৎসবে সামিল হয়ে থাকেন। এবছরও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদ ও ঈদগাহে কোরবানির নামাজ পাঠ করা হয়েছে। তবে,এবছর দুর্গাপুরে এক ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল ইস্পাত নগরীর আকবর রোডে। সামনেই বাংলার এক বড় উৎসব রথযাত্রা। অন্যান্য শহরের মতো দুর্গাপুরেও এই উৎসব বেশ ধূমধামের সঙ্গেই পালিত হয়। দীর্ঘ চার দশক ধরে শহরের চিত্রালয় ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে রথের মেলা,যা অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর পাশাপাশি বিগত দু বছর ধরে ইস্পাত নগরীর এজোনের আকবর রোড ময়দানেও রথ উৎসব শুরু হয়েছে। এর পরিচালনায় রয়েছে দুর্গাপুরের ইসকন মন্দির সংস্থা। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রথ উৎসব। তাই ইসকন কমিটি ইতিমধ্যেই সেই রথ উৎসবের মেলার প্রস্তুতির জন্য আকবর ময়দানে বাঁশের কাঠামোসহ অন্যান্য কাজ শুরু করেছে। কিন্তু, এই মাঠেই বহু বছর ধরে ঈদের নামাজ পড়তে আসেন শহরের মুসলিম ধর্মালম্বীরা। মেলার প্রস্তুতির কারনে মাঠের চারিদিক বাঁশ ও বাঁশের কাঠামোয় ভর্তি থাকায় এবার নামাজ কিভাবে পড়া হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় দুর্গাপুরের আকবর রোডের ঈদগা কমিটি। অবশেষে কমিটির কর্তা হারুল রশিদ বাধ্য হয়েই রথ উৎসবের প্যান্ডেলের নিচে নামাজ পড়ার জন্য আবেদন করেন ইসকনের প্রধান সেবায়েত ওধ্যাজ্যচন্দ্র দাসের কাছে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে রথের মেলার প্রস্তুতির মাঠে বাঁশের কাঠামোর উপর ত্রিপল টাঙানোর ব্যবস্থা করে দেন ইসকন কর্তৃপক্ষ। আর সেখানেই এলাকার মুসলিম ধর্মের মানুষরা তাদের পবিত্র বকরি ঈদের নামাজ পড়লেন। বাস্তবিকই এই ছবি মানবতার এক প্রতীক হয়ে রইল দুর্গাপুরের বুকে। ইসকন কর্তৃপক্ষের এই ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আকবর রোড ইদগা কমিটির পক্ষে হারুল রশিদ বলেছেন, “ইস্কনের প্রধান সেবায়েত ওধ্যাজ্যচন্দ্র দাস আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তাতে আমরা সত্যি আপ্লুত”। তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী দিনে ইসকনের যে কোনো কাজে তাদের সহযোগিতা করার জন্য তারাও এগিয়ে আসবেন। অন্যদিকে, ইসকনের প্রধান সেবায়েত ওধ্যাজ্যচন্দ্র দাস বলেছেন, “জগতের নাথ জগন্নাথ সবার। আমরা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতে চাই।”