ডেটলাইন কলকাতাঃ আজকের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া তথা ঐক্যবদ্ধ ভারতের বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে আসা বিজেপি বিরোধী অন্তত ২৬টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এত বড় মঞ্চে বিজেপি বিরোধী সবকটি দলের অন্তত একজন করে প্রতিনিধিকে একত্রিত করে সেই কাজে সাফল্যের লক্ষ্যে আজ অনেকটাই এগিয়ে গেলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এর মধ্যে অরুণ শৌরি, যশবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্ন সিনহাদের মতো বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতাদের সমাবেশে যোগদান মোদি বিরোধী এই লড়াইকে বাড়তি অক্সিজেন দেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা অরুণ শৌরি বলেন, ‘এত বড় মিথ্যের সরকার আগে হয়নি। সিবিআই, আরবিআইয়ের মতো সব স্বশাসিত সংস্থাকে নিজের কবজায় আনতে বদ্ধপরিকর। এত কেলেঙ্কারি আগে হয়নি। নোটবাতিলের মতো সর্বনাশা সিদ্ধান্ত এর আগে কেউ নেয়নি। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থানে যেমন ক্ষমতাচ্যূত হয়েছে, তেমনই এবারের ভোটেও এদের ভাগিয়ে দিতে হবে। এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ান ইজ টু ওয়ান ফর্মুলাকে গ্রহণ করে অরুণ শৌরির আরও পরামর্শ, ‘বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজনই বিরোধী প্রার্থীর লড়াই করা উচিৎ। বিজেপির আরও এক বিক্ষুব্ধ নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বলেন,এটা কোনও ব্যক্তি কেন্দ্রিক লড়াই নয়। এই লড়াই একটি বিচারধারার। আমরা মোদির বিচারধারার বিরুদ্ধে লড়ছি। আজ দেশে এমন কোনও সাংবিধানিক সংস্থা নেই, যাকে ইনি শেষ করার পথে নিয়ে যাননি। তাই দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য আমরা একত্রিত হয়েছি। মঞ্চে ২৬টি বিরোধী দলের নেতাদের সামনে রাহুল গান্ধীর প্রতিনিধি হয়ে আসা কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভির বলেন, মেঘ সরছে, রামধনু তৈরি হচ্ছে। আমাদের রং আলাদা হতে পারে, কিন্তু আলাদা আলাদা রং এক জায়গায় হয়েই রামধনু তৈরি হয়। একজোট বা মহাজোট যা ইচ্ছে বলতে পারেন। আজ এই রামধনুর সময় হয়েছে। এই মহান প্রচেষ্টার জন্য তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান। কংগ্রেসের আরও এক নেতা সোনিয়া গান্ধীর প্রতিনিধি মল্লিকার্জুন খার্গেও জানান,গণতন্ত্রকে বাঁচাতেই এই জোট দরকার।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া বলেন,‘এই প্রথম মহাজোট এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছে। আর মাত্র ২ মাস সময় রয়েছে ২০১৯–এর লোকসভা ভোটের। এর মধ্যেই আমাদের সংগঠিত হতে হবে। মোদির পরে কে বসবে, এই মঞ্চ সেই পথনির্দেশ করছে বলেও মন্তব্য করেন এই প্রবীন রাজনীতিবিদ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ‘দেশের যুবকদের কাছে চাকরি নেই। তাঁদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদি ভোটে জিতেছিল। আসলে দেশের সর্বনাশ করছেন মোদি। সংবিধানকে সবসময় খর্ব করার চেষ্টা চলছে’। এদিনের সমাবেশে অখিলেশ যাদব,শরদ পাওয়ার,চন্দ্রবাবু নাইডু,এম কে স্ট্যালিন,তেজস্বি যাদব,গেগং আপাং,লালডু হোমা,জয়ন্ত চৌধূরী,গুজরাতের নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেবানি, গুজরাতের পতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল, কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আবদুল্লা ও ওমর আবদুল্লার মতো দেশের প্রথম সারির নেতারা যোগদান করেন এবং তারা প্রত্যেকেই বিজেপি বিরোধী জোটকে শক্তিশালী একটা মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এদিন শুরু থেকেই সভার সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। তাই সবার বলার পর তিনি বক্তব্য রাখেন। মমতা বলেন,’মোদি সরকারের এক্সপায়ারি ডেট শেষ হয়ে গিয়েছে। ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার মঞ্চে ২৩ থেকে ২৬টি রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার নতুন সকাল হবে। একসঙ্গে আমরা কাজ করব। এটা আমার প্রতিশ্রুতি। বাংলা স্বাধীনতা আন্দোলনে পথ দেখিয়েছে। দেশে যখনই বিপদ এসেছে বাংলা পথ দেখিয়েছে। বিজেপি দাঙ্গায় ব্যস্ত। ব্যাঙ্কে ধস, সিবিআইয়ে ধস, আরবিআইয়ে ধস, অর্থনীতিতে ধস, শুধু বিজেপি বস। দেশকে লুঠ করছে এই সরকার। দুর্নীতি করে চলেছে। একাধিক প্রকল্পের নামে দুর্নীতি চলছে। এরকম হিটলারের কায়দায় কেউ শাসন করেননি। বদল দো বদল দো, দিল্লি কা সরকার বদল দো।’ এদিনের ব্রিগেড সভা কার্যত আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। তা সে জনসমাগমের ক্ষেত্রেই হোক আর দেশের একগুচ্ছ রাজনৈতিক তারকাদের একমঞ্চে উপস্থিতির ক্ষেত্রেই হোক।