অন্যরকম দুর্গাপুজো এবার বঙ্গে

0
794

ডেটলাইন ওয়েব ডেস্কঃ সুসজ্জিত মন্ডপ কিন্তু সেই মন্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইরে ব্যারিকেড। সেখান থেকেই প্রতিমা দর্শন। হ্যাঁ,করোনা আবহে এবারের দুর্গাপুজো একেবারেই অন্যরকম। আগে বেশ কয়েকবার বঙ্গে বন্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটেছে ঠিকই কিন্তু তাতে বাংলার সেরা উৎসবে খুব বেশি প্রভাব পরেনি। বিশেষ করে আগে কখনও এতো বিতর্ক ও বিধিনিষেধের মধ্যে শারদোৎসব পালন করতে হয়নি। এবার মহালয়ার এক মাসেরও পর অনুষ্ঠিত হয়েছে দুর্গাপুজো। পরপর দুটি মলমাস পড়ে যাওয়ায় এই বছর এতটা পরেই আয়োজিত হয় বাংলার সর্ববৃহৎ উৎসব। চলতি বছরে মহামারী করোনা ভাইরাস গ্রাস করেছে গোটা বিশ্বকে। আমাদের দেশ এবং পশ্চিমবঙ্গও সেই গ্রাসের কবল থেকে রেহাই পায়নি। ভাইরাস মোকাবিলায় দেশজুড়ে টানা লক ডাউনের প্রভাব পরেছে বাংলার জনজীবনে। বহু ক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। অনেকেরই কাজ হারিয়েছে। একটা চরম আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে পরতে হয়েছে অনেক পরিবারকে। এরকম একটা পরিবেশেই এবার এসেছে বাংলার সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। পুজোর আয়োজন হবে কিনা। হলেও তার ফল কি হতে পারে এসব নিয়ে তৈরী হয় বিতর্ক। এমনকি পুজোর আয়োজন নিয়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। যা বাস্তবিকই নজিরবিহীন ঘটনা। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই বাংলায় দুর্গাপুজোর ছাড়পত্র মেলে। শুধু তাই নয়, কোভিডকালের কথা ভেবে পুজো কমিটিগুলিকে সরকারের তরফে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদানও দেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এসব নিয়ে আদালতে মামলা হয় এবং বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হয়েছে সরকারকে। অবশেষে পুজো নিয়ে আদালতের বিশেষ নির্দেশ মেনেই বাংলায় দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। তাই বলে জাঁকজমক কিন্তু তেমন কমেনি। প্রতিবারের মতো এবারও থিম পুজোয় সেজে উঠছে  দুর্গাপুরের বহু প্যান্ডেলই। করোনা রয়েছে ঠিকই, তা বলে কী কেউ ঠাকুর দেখতে যাবেন না? এমনটা হতেই পারে না। তাই রাস্তায় ও মন্ডপ চত্বরে ভালোই ভিড় দেখা গেছে। তবে এটাও ঠিক যে বিগ বাজেটের পুজোগুলি এবার তাদের বাজেট অনেকটাই কমিয়েছে। অনেকে বাড়ি বসেই উদযাপন করেছেন দুর্গা পুজো। টিভি দেখে, পাড়ায় মন্ডপে গিয়ে একটা প্রণাম সেরে এসেও বাঙালির এই সেরা উৎসবে মেতে উঠেছে অনেকে। এরই মধ্যে নিম্নচাপ হানা দেওয়ায় আকাশের মুখ ভার হয়ে উঠলেও শেষমেষ তেমন কিছু না হওয়ায় খুশি বাঙালি। কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা, মণ্ডপে ঢুকে প্রতিমা দর্শনের অনুমতি না থাকার কারনে রাস্তায় মানুষজনের সংখ্যা বেশ কিছুটা কম। শহরতলির ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় দূরের জেলা থেকে দর্শনার্থীরা কলকাতায় যেমন যেতে পারেনি তেমনি বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ এবার দুর্গাপুরেও আসতে পারেনি। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে আগেই বাড়িতে বসে পুজো দেখার সুযোগ ছিল কিন্তু এবার অনেকগুলি সংস্থা এই পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এমনকি রাজ্য সরকার ই-পুজো পরিক্রমার ব্যবস্থা করেছে। যারা উৎসবের দিনগুলিতে বেরিয়ে খাওয়াদাওয়া পছন্দ করেন, তাদের জন্য বাড়িতে ভোগ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। সবমিলিয়ে ‘নিউ নর্মাল’-এর পুজোয় স্লোগান উঠেছে— ‘বোধন থেকে বিসর্জন, অনলাইনে সারাক্ষণ’। অনেক জায়গায় মূলত প্রবীণ ও প্রবাসীদের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘ভার্চুয়াল’ উৎসব উদ্‌যাপনে কোনো মন্ডপের বাইরে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হয়েছে৷ কোথাও লাগানো হয়েছে এলইডি টিভি। কোথাও পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জুম বা গুগল মিট-এ। কোথাও আবার মন্ডপে মন্ত্র উচ্চারন করেছেন পুরোহিত আর সেটা শুনে বাড়ি থেকেও দেওয়া হয়েছে পুষ্পাঞ্জলি।করোনার বিপদ কারও অজানা নয়। তবু এই উৎসবে মেতে উঠতে দেখা গেল আম বাঙালিকে। সঙ্গে মায়ের কাছে প্রার্থনা- করোনা থেকে মানুষকে মুক্তি দাও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here