ডেলাইন দুর্গাপুর: গত বিশ সালের দিনগুলি করোনা আতঙ্কে সারা বিশ্বের সঙ্গে শহর দুর্গাপুরও যখন উদ্বেগের প্রহর গুনতে গুনতে ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছিল। ঠিক তখনই বহু বছরের পুরনো এক জীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নীরবেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে গুছিয়ে আধুনিক এক রূপ দেওয়ার কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জইনুল হক। হ্যাঁ,দুর্গাপুর শহরের অদূরে জেমুয়া গ্রামের ভাদুবালা উচ্চ বিদ্যালয় এর কথাই বলা হচ্ছে। করোনা কালে চারিদিক যখন নিঝুম। রাস্তাঘাটে লোক জনের দেখা নেই। সেই সময়ই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্র নিয়ে স্কুলের চারিদিকের জঙ্গল পরিষ্কার করতে নিজেও হাতে কোদাল নিয়ে নেমে পড়েছিলেন জইনুল। কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে বর্তমানে ভাদু বালা স্কুলটি ঝা চকচকে হয়ে উঠেছে। ১৯৭৩ সালে পথ চলা শুরু করা প্রায় ৪৮ বছরের পুরোনো জীর্ণ স্কুলটি এখন আর চেনাই যায় না। উল্লেখ, জেমুয়া গ্রামেরই বাসিন্দা ভাদুবালা দাস গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসার লক্ষ্যে অনেক কষ্টে তার সঞ্চয় করা ২৩ হাজার টাকা ও এক একর জমি স্কুল নির্মাণের জন্য দান করেছিলেন। কালক্রমে সেই স্কুল ভবন জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। তাই সংস্কার না হলে এই স্কুলের অস্তিত্ব আর ধরে রাখা যেত না। অবশেষে ঝকঝকে রঙে স্কুলের এক একটি ব্লক বিশিষ্ট মনীষীদের নামে করা হয়েছে। দেওয়ালে নানা রঙের শিক্ষামূলক ছবিতে আকর্ষনীয় করে তোলা হয়েছে। মনীষীদের ছবিসহ লেখা রয়েছে তাদের নানা বিখ্যাত উক্তি। স্কুলের দেওয়ালে কে না শোভা পাচ্ছে। রবীন্দ্র নজরুল ছাড়াও রয়েছেন বিদ্যাসাগর,রামকৃষ্ণ,নারী শিক্ষার প্রসারক বেগম রোকেয়া,সাবিত্রী বাই ফুলে, এমনকি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে দিয়াগো ম্যারাডোনা ও। স্কুলের চারটি ভবন ও ২১ টি শ্রেণী কক্ষ সংস্কার করা হয়েছে। জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে একদিকে যেমন ফুলের বাগান করা হয়েছে তেমনই করা হয়েছে সবজি বাগান। স্কুলের মিড ডে মিলে সেই সবজি ব্যবহার করা হচ্ছে। তৈরী হয়েছে খেলার মাঠ। স্কুলে মেয়েদের জন্য কোনো শৌচাগার ছিল না। তাই ড্রপ আউট ও বাড়ছিল। শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের জন্য একাধিক শৌচাগার তৈরী করা হয়েছে। হয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থাও। কিন্তু কিভাবে হলো ভাদুবালার এই ভোল বদল? না সরকারী কোনো অনুদান ছিল না। পুরোটাই সম্ভব হয়েছে স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষিকা,প্রাক্তন ছাত্র ও জেমুয়া গ্রামের বহু শিক্ষানুরাগী দের আর্থিক অনুদানে। এই সংস্কার যজ্ঞে খরচ হযেছে ১১ লক্ষ টাকা। যেখানে প্রধান শিক্ষক জইনুল হক নিজেও দান করেছেন ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। কিছুদিন আগেই স্কুলের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে যার দান করা জমিতে গড়ে উঠেছে এই স্কুল সেই ভাদু বালা দেবীর আবক্ষ মূর্তি। ভাবতে ভালো লাগে যে শুধু মাত্র অনুদানের টাকায় প্রায় রাতারাতি ৪৮ বছরের একটি জীর্ন স্কুল ঝা চকচকে করে তোলা হয়েছে। এটা অবশ্যই শিক্ষা ক্ষেত্রে একটা নজির। সম্প্রতি এ ডি ডি এর পক্ষ থেকে স্কুলে একটি অডিটোরিয়াম গড়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে গড়ে দেওয়া হবে প্রধান শিক্ষকের ভবনও। বর্তমানে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১ হাজার ৩২ জন। আর শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা ১৪। প্রধান শিক্ষক মনে করেন বর্তমানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা যা তাতে আরও শিক্ষক শিক্ষিকা হলে ভালো হয়। স্কুলের এই সংস্কার সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক মনে করেন, পড়াশোনার সঙ্গেই স্কুলের একটা আদর্শ পরিবেশও বিশেষ ভূমিকা নেয়। এটা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত জীবনেও কাজে লাগতে পারে। তাছাড়াও ইংরাজি মাধ্যম ঝা চকচকে স্কুল গুলির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে বাংলা মাধ্যম স্কুল গুলির ও পরিবেশকে আধুনিক করে তোলা দরকার বলে মনে করেন প্রধান শিক্ষক জইনুল হক।