ক্ষুদিরামই প্রথম বাঙালি বিপ্লবী যাঁকে ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশরা

0
2054

ডেটলাইন ওয়েব ডেস্কঃ “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি”। দেশপ্রেমের এই গান যখনই স্মরণে আসে, তখনই যেন অবচেতনেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ১৮ বছরের এক তরতাজা যুবকের হাসিখুশি মুখ। তিনি ক্ষুদিরাম বসু। হ্যাঁ,ক্ষুদিরামই প্রথম বাঙালি বিপ্লবী যাঁকে ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। দিনটা ছিল ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট। ক্ষুদিরামের বয়স তখন ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। এতো অল্প বয়সী এক তরতাজা যুবক ফাঁসীর আসামীকে দেখে জেলার প্রশ্ন করেছিলেন, মৃত্যুর আগে তোমার শেষ ইচ্ছা কী? কোনো দ্বিধা না রেখেই ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, আমি ভালো বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর আগে সারা ভারতবাসীকে সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই। এই মৃত্যুঞ্জয়ী নিজের মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা শুনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে খিল খিল করে হেসে উঠেছিলেন। এই অভূতপূর্ব ঘটনায় স্তম্ভিত বিচারক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমার ভয় করছেনা ? ইংরেজ বিচারককে আরও স্তম্ভিত করে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ক্ষুদিরাম উত্তর দিয়েছিলেন,আমি গীতা পড়েছি। আমার মৃত্যুভয় নেই। এযুগের একজন ১৮ বছরের তরুনের কাছে এগুলো সত্যি অবাস্তব। তবে আজও দেশের ছাত্র যুব সমাজের কাছে দেশপ্রেমের এক রক্ত গরম করা নাম – ক্ষুদিরাম বসু। সে সময় ক্ষুদিরামের পক্ষের আইনজীবি ছিলেন উপেন্দ্রনাথ সেন। তাঁর বয়ানে তিনি লিখেছেন, “ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরাম নির্ভীকভাবে উঠে যান। তাঁর মধ্যে কোন ভয় বা অনুশোচনা কাজ করছিল না। এদেশের নবীন যৌবনের প্রতীক হয়ে হাসিমুখে তিনি উঠে যান ফাঁসির মঞ্চে।” তাইতো বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস এই বিপ্লবীর আত্মত্যাগের উপাখ্যানকে কেন্দ্র করেই গানে লিখেছিলেন –
“একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।” এই গান শুনলেই যেন চোখের সামনে সেই ক্ষুদিরামকে আমরা দেখতে পাই। ছোটবেলা থেকেই ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন দৃঢ়চেতা। ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার।তাঁর মার নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিন মেয়ের পর মায়ের চতুর্থ সন্তান ক্ষুদিরাম। দুই ছেলে অকালে মৃত্যুবরণ করেন, তাই ছোট ছেলের মৃত্যুর আশঙ্কায় লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তাকে তাঁর বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে ক্ষুদিরাম নাম রাখা হয় তাঁর। ক্ষুদিরাম যত বড় হয়েছেন ততই তাঁর মধ্যে বেড়ে উঠেছে দেশাত্মবোধ। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতি স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিখ্যাত আলিপুর বোমা মামলায় ক্ষুদিরামের ফাঁসির সাজা ঘোষনা হয়। রায় শোনার পরে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা যায়। তার বয়স খুব কম ছিল। মাত্র ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। বিচারক কর্নডফ তাই তাকে প্রশ্ন করেন, তাকে ফাঁসিতে মরতে হবে সেটা কি সে বুঝেছে ? সেই প্রশ্নের উত্তরে নির্বিকার ক্ষুদিরামকে বিচারক আবার প্রশ্নটি করেন। তখনই ক্ষুদিরাম বেশ তেজ ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেছিলেন,‘আমাকে একটু সময় দিলে আমি সারা ভারতবাসীকে শিখিয়ে দিতাম কি করে বোমা বানাতে হয়। তার সেই উক্তি পরাধীন ভারতীয় ছাত্রযুবদের কাছে স্বদেশী আন্দোলনের যেন এক মন্ত্র হয়ে উঠেছিল। বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ় মানসিকতা তৈরী হয়েছিল তাদের মধ্যে। এমনই দেশভক্ত এক দুঃসাহসিক ভারত সন্তানের আজ প্রয়াণ দিবস। তাঁর ১১৩ তম শহীদ দিবস সারা দেশেই যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গেই আজ পালিত হয়। এদিন শহর দুর্গাপুরেও নানা কর্মসূচী লক্ষ্য করা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here