ডেটলাইন দুর্গাপুরঃ মহামারী করোনা আক্রান্ত বিশ্বে সব কিছুই বদলে গেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও তার প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানের চরিত্রও বদলে গেছে কোভিড – ১৯ এর ধাক্কায়। সেই ধারা এবার দেখা যাচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের এক অন্যতম পবিত্র উৎসব মহরমের ক্ষেত্রেও। মহরমে এবারের আহ্বান- ‘অস্ত্রের ঝনঝনানি নয়,শরীরের রক্তপাত নয়, মানবতার জন্য বাড়াও হাত রক্তদানে’। দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম ও মুচিপাড়া আঞ্জুমান ইসলামিয়া কমিটির উদ্যোগে সিটি সেন্টারে দুর্গাপুর মুসলিম ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ভবনে আয়োজিত মহরম উপলক্ষ্যে এক স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরে এমনই বার্তা শোনা গেল। সাধারনভাবে মহরম মানেই শহীদ স্মরণে শোভাযাত্রা বের করে সেখানে তলোয়ারের ঝংকার দেখা যায়। কারবালা ময়দানে নাবালক আলি আসগরের নির্মম হত্যাকান্ডের স্মরণে নিজেদের শরীর ক্ষতবিক্ষত করে রক্ত ঝরানো হয়। কিন্তু এবার থেকে তার বদলে মানবসেবায় আত্ম নিয়োগ এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে শহীদ স্মরণে স্বেচ্ছা রক্তদানের আহ্বান জানানো হল। এদিন সিটি সেন্টারে মুসলিম ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে টিম অনুভবের আয়োজনে রক্তদান শিবিরে এই বার্তাই দেওয়া হয়। এদিন এখানে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট ২৬ জন রক্তদান করেন। সম্প্রীতির এই রক্তদান শিবিরে মোট ২৬ জনের মধ্যে ৩ জন মহিলাও ছিলেন। এখানে ১৩ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও রক্তদান করেছেন। শিবিরে উপস্থিত ছিলেন আসানসোল জেলা হাসপাতাল ব্লাড সেন্টার ইনচার্য ডাঃ সঞ্জিত চ্যাটার্জি,ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশনস অফ ইন্ডিয়া,পশ্চিমবঙ্গ শাখার রাজ্য সম্পাদক কবি ঘোষ, জেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি তপন মাহাতা, সম্পাদক অসীম সরকার,বিশিষ্ট আইনজীবি আয়ূব আনসারী,বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ এ.রহমান প্রমূখ। উল্লেখ্য, এই শিবিরে করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের প্লাজমা সংগ্রহের সূচনা হয়েছে। দুর্গাপুর ইস্পাতকর্মী কোভিড জয়ী সেপকোর বাসিন্দা কিংশুক গুপ্ত তার প্লাজমা ডোনেশন করেন। তার স্ত্রী নবনীতা গুপ্তও কোভিড জয়ী। তিনিও প্লাজমা ডোনেশন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়মের বাঁধার কারণে দিতে পারেননি বলে জানা গেছে। এখানে আসানসোল জেলা হাসপাতাল ব্লাড সেন্টার এই রক্ত সংগ্রহ করেছেন। কিংশুক গুপ্ত’র রক্তদানের মধ্য দিয়ে শিবির শুরু হয়। চালু হল কোভিড জয়ীর প্লাজমা ডোনেশন। ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশনস অফ ইন্ডিয়া,পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার সম্পাদক কবি ঘোষ জানিয়েছেন,আমরা এই ডোনেশন শুরু করছি রাজ্যে একটা বার্তা দিতে। যেহেতু এই ডোনেশন কেবল মাত্র কোভিড জয়ীরা দিতে পারেন তাই কোভিড জয়ীদের এগিয়ে আসার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমাদের হেল্পলাইন নম্বর ৮৬০৯৮০৫৪০৭। তিনি আরও জানান, আগামী দিনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কোভিড হাসপাতাল থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হবে।কোভিড জয়ীদের কাছে ব্যক্তিগতভবে আবেদন করা হবে। সারা রাজ্যে এই প্লাজমা ডোনেশন করার জন্য রাজ্য সংগঠনগতভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত বিভিন্ন জেলায় এই কাজ করা হবে।প্রসঙ্গত এদিন আরও কয়েকটি রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়। সাগরভাঙ্গা গ্রাম যুবকবৃন্দ ক্লাবের উদ্যোগে এক মহিলাসহ ৩২ জন রক্তদান করেন। রক্ত সংগ্রহ করে আসানসোল জেলা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্ক। হিন্দ মজদুর সভা ও লায়ন্স ক্লাবের উদ্যোগে দুর্গাপুর টাউনশীপে বিদ্যাসাগর এভিনিউয়ের শিবিরে একজন মহিলাসহ মোট ৩৩ জন রক্তদান করেন । এখানে রক্ত সংগ্রহ করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্ক। এছাড়াও প্রয়াস -দুর্গাপুর ফরিদপুর ভলান্টারি ব্লাড ডোনারস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে লাউদোহা কমিউনিটি হলে আয়োজিত শিবিরে ৪ জন মহিলাসহ মোট ২৯ জন রক্তদান করেন এবং এখানে রক্ত সংগ্রহ করে দুর্গাপুর হেলথ ওয়াল্ড হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংক। দুর্গাপুরের রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাজেশ পালিত জানিয়েছেন যে তারা এই সময়ে আরেকটি অত্যাধুনিক বিশেষ ব্লাড ডোনেশন শুরু করেছেন, তা হল সিঙ্গল ডোনার প্লেটলেট ডোনেশন (SDP)।প্রদীপ শীল গত ৭ আগস্ট এই ডোনেশন করেছেন। আরো ১৫ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।