ডেটলাইন দুর্গাপুরঃ গত বছরের মতো এবছরও কোভিড আবহে শেষ হল বাঙালির সেরা বাৎসরিক উৎসব দুর্গাপুজো। ২০২০ সালের প্রথম দিকে সারা বিশ্বের সঙ্গে এদেশেও মহামারী করোনা গ্রাস করেছিল আমাদের। ধারাবাহিক লক ডাউনের জেরে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল সবাই। আমাদের সকলের জীবনেই স্বাভাবিক ছন্দ হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। বহু মানুষের মৃত্যু, অনেক ক্ষয়ক্ষতির পর করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়েছে। করোনার সংক্রমন মোকাবিলায় এই ভ্যাকসিন কার্যকরী বলেই তৎপরতার সঙ্গে চলছে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ। করোনার আতঙ্ক যেমন রয়েছে তেমনই এবার পর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হয়েছে বহু মানুষকে। প্রবল বর্ষনের জেরে অনেক এলাকা ডুবে গিয়ে যেমন চাষের ক্ষতি হয়েছে তেমনই অনেক মানুষ নিরাশ্রয় হয়েছে। চরম এই সব প্রতিকূলতাকে নিয়েই পালিত হল বাংলার সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। চারদিনের পুজো এবার প্রায় নির্বিঘ্নেই কেটেছে। নবমীর দিন অনেক জায়গায় বৃষ্টি হলেও তা পুজোর আনন্দে বাধা হতে পারেনি। রাজ্য সরকারের কোভিডবিধি মেনেই রাজ্যের সব জায়গার সঙ্গে দুর্গাপুরেও দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছে। শহরের নামী পুজোগুলি করোনার সতর্কতা মেনেই পুজো করলেও সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে যথেষ্ঠই। এবার এই ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ভিড়িঙ্গির নবারুন। কারন, সরাকারের নিয়ম মেনেই এখানে এবারও কোনো মেলা যেমন বসেনি তেমনই নবারুনের ঐতিহ্য মেনে এবার সেরকম আকর্ষণীয় মন্ডপও তৈরী হয়নি। তাই দুর্গাপুরের অন্য নামী পুজোগুলির মতো এখানে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। পুজোর কটা দিন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে সারাদিন পুজোর সরকারী বিধি মানা হচ্ছে কিনা সেদিকে কড়া নজরদারী রেখেছে। একইভাবে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনও ভালো ছিল। তাই গাড়ি চালক ও পথচারীদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। আজ বিজয়া দশমী। স্বাভাবিকভাবেই বাঙালির মন অনেকটাই ভারাক্রান্ত। অনেক মন্ডপেই এদিনই প্রতিমা বিসর্জন। আবার অনেক মন্ডপে প্রথামতো ঘট বিসর্জন হলেও প্রতিমা নিরঞ্জন হবে রাতে বা আগামীকাল। কোভিড নিয়ম মেনেই চলেছে সিঁদুর খেলাও। বাঙালির কাছে দুর্গাপুজোর ধর্মীয়,সাংস্কৃতিক,সামাজিক গুরুত্ব অনেকটাই আলাদা। সাধারণতঃ আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে বাঙালির এই উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেই শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত দেবীর আরাধনা চলে। এই পাঁচ দিন দুর্গা ষষ্ঠী নামে পরিচিত। এই সংশ্লিষ্ট পক্ষটির অপর নাম হল দেবীপক্ষ। পিতৃপক্ষের অবসানে অমাবস্যায় মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা ঘটে। মহালয়ার পবিত্র দিনটিতে মানুষ তাদের পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে থাকেন। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি কোজাগরী পূর্ণিমার পূণ্য চন্দ্রের পবিত্র আলোকে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার মধ্য দিয়ে। বিশ্বজুড়ে সকল বাঙ্গালীদের কাছে এই শারোদৎসব অত্যন্ত কাছের। ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা শহর হল শারদ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। যতদূর জানা যায় কলকাতা শহরে সর্বপ্রথম দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিলেন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। প্রাচীন এই পূজাটি এখনো রায়চৌধুরী পরিবারের সাতটি শাখার বিভিন্ন বাড়িতে আয়োজিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতায় শোভাবাজারের রাজবাড়ীতে একটি পূজার আয়োজন করেন মহারাজ রাধাকান্ত দেব। তার দেখাদেখি কিছুকাল পর থেকেই কলকাতার বিভিন্ন জমিদার ও উচ্চবিত্ত বাড়িতে শারদ উৎসবের আয়োজন করা হতে থাকে। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পূজাগুলিতে আচার ও আনন্দের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়াত নিজেদের প্রতিপত্তি ও বিত্তের জৌলুস প্রদর্শন এবং সাহেবি বেলেল্লাপনা। সাধারণ আপামর বাঙালির সাথে এই পূজার কোন যোগসূত্র ছিলনা। এই প্রবণতায় ক্ষুব্ধ হয়ে রানী রাসমণি তার জানবাজারের বাড়িতে সাধারণ মানুষের প্রবেশযোগ্য একটি দূর্গা পূজার আয়োজন করেন। তারপর থেকেই একটু একটু করে বিভিন্ন পরিবারে পারিবারিক দুর্গোৎসবের প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে। আজ আর এই উৎসব শুধু কতগুলো ধনী বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে শুধু কলকাতার বিভিন্ন বাড়িতেই নয়,রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই শরৎকালের এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রথমদিকে কলকাতা শহরের মূল আকর্ষণ ছিল সার্বজনীন দুর্গোৎসব। পরে কলকাতার গন্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যের সর্বত্রই সার্বজনীন দুর্গাপুজোর রেওয়াজ বেড়েছে। শহর দুর্গাপুরও সেই দৌড়ে সামিল হয়েছে। এখানকার একাধিক পুজো রাজ্যের প্রথম সারির পুজোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।বিশাল প্যান্ডেল,থিম,আকর্ষণীয় লাইট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মিলিয়ে পুজোর এই কয়েকটা দিন বাঙালির হৃদয় ও মনকে এক পরিছন্ন আনন্দে উদ্ভাসিত করে তোলে। যদিও এবার অনেক জায়গায় বাহারী মন্ডপ হলেও কোথাও কোনো মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি ছিল না। তবু,বাঙালি তার ঐতিহ্য মেনেই মেতে উঠেছিল দুর্গোৎসবে। দশমীর প্রান্তে এসেও যার রেশ আরও কদিন থেকে যাবে,যেমনটি প্রতি বছর হয়ে থাকে। তারপর আবার অপেক্ষা এক বছরের।
Latest article
দুর্গাপুর ও আসানসোলের ১২টি পুজো পেল রাজ্য সরকারের শারদ সম্মান
সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ দুর্গাপুর ও আসানসোলের মোট ১২টি পুজো এবার পেল রাজ্য সরকারের শারদ সম্মান পুরস্কার। মোট চারটি বিভাগে আসানসোল ও দুর্গাপুরের ৬টি করে...
কোক ওভেন থানার উদ্যোগে সাইবার অপরাধ বিষয়ে সচেতনতা শিবির
ডেটলাইন দুর্গাপুর, ৪ সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুর প্রজেক্ট টাউনশিপ গার্লস হাই স্কুলে বৃহস্পতিবার কোক ওভেন থানার পক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল এক সাইবার সচেতনতা শিবির।...
কোক ওভেন থানার উদ্যোগে চক্ষু পরীক্ষা শিবির ও অঙ্কন প্রতিযোগিতা
ডেটলাইন দুর্গাপুর,৩ সেপ্টেম্বরঃ গত ১ সেপ্টেম্বর ছিল পুলিশ দিবসের পাশাপাশি আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের প্রতিষ্ঠা দিবসও। এই উপলক্ষ্যে আসানসোল ও দুর্গাপুরের বিভিন্ন...