ডেটলাইন নিউজ ডেস্কঃ মহালয়া ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একই মুদ্রার যেন দুই পীঠ। বাংলার সেরা উৎসব শারদীয়া এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যেন একই মুদ্রার দুই পীঠ। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী না শুনলে মহালয়া সম্পূর্ণ হয় না। বহু বছর ধরে এটাই অভ্যাস হয়ে উঠেছে বাঙালির। একবারই এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছিল। সেটা ছিল ১৯৭৬ সাল। সে বছর আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবর্তে বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তমকুমারকে দিয়ে মহালয়ার অন্য একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছিল। কিন্তু তা জনমানসে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। অবশেষে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষকে সেই অনুষ্ঠানের পরিবর্তে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্ঠে মূল মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটিই সম্প্রচার করতে হয়। অতএব সহজেই বোঝা যায় যে মহালয়া আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কতটা একাত্ম হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে। দুর্গোৎসবের পূণ্যলগ্ন হল শুভ মহালয়া। কল্যাণময়ী জগতজননী দুর্গা দেবীকে মর্ত্যে আসার আমন্ত্রণ জানানোর দিন। মানবকল্যাণ প্রতিষ্ঠায় মহাশক্তির প্রতীক দেবী দুর্গা। মায়ের মতোই আবির্ভাব ও ভূমিকা তার। এ জন্যই তিনি সকলের মা দুর্গা। প্রতিবছর শরৎকালে দুর্গা দেবীমাতা মর্ত্যে আসেন ভক্তদের কল্যাণ সাধন করে শত্রুর বিনাশ ও সৃষ্টিকে পালন করার উদ্দেশ্যে। সঙ্গে নিয়ে আসেন তার সন্তান গণেশ, কার্ত্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে। এবারও তার আগমনী বার্তা পৌঁছে গেছে বাঙালির ঘরে ঘরে। মহালয়া উদযাপনের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উচ্চারিত হয় দুর্গার আগমনী ধ্বনি। সবাই নিশ্চিত মহালয়া মানেই দূর্গাপুজোর দিন গোনা। মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমী , তাই মহালয়ার পর থেকেই চলবে দেবীপক্ষ। ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য আসল দূর্গা পূজা হলো বসন্তে , সেটাকে বাসন্তী পূজা বলা হয় । শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয়। এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরণ করে, পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করা হয়। তাই মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়গুলিতে ভক্তদের ভীড় দেখা যায়। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্তে আগমন ঘটে। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষে শুরু হয় দেবীপক্ষ। ১৯৩১ সাল থেকে আজও কলকাতার আকাশবাণী থেকে দুর্গাপূজার সূচনায় মহালয়ার দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটির রেকর্ড সম্প্রচারিত হয়ে আসছে যা বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।