ডেটলাইন দুর্গাপুরঃ ২০২০ সালের শুরুতে মহামারী করোনা ভাইরাসের দাপটে তোলপার হয়ে ওঠে গোটা বিশ্ব। মৃত্যু মিছিল দেখে প্রমাদ গুণতে থাকে মানব সমাজ। সেই মহামারীর ঢেউ এসে পড়েছিল আমাদের দেশেও। যা চলতি ২০২১ সালেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে অব্যাহত। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মহামারী করোনার কোপে মানুষের মৃত্যু মিছিল দেখা দেওয়ায় সৎকার নিয়ে রীতিমতো অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অনেক দেশে তো করোনায় মৃতদের দেহ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে। শ্মশানঘাটের তুলনায় শবদেহের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় সর্বত্রই চাপ বাড়ছে। তাই আরও বেশি সংখ্যায় বৈদ্যুতিক চুল্লির শ্মশান তৈরীর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এবিষয়ে পরিকল্পনা নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুর মহকুমাতেও পুরানো শ্মশানগুলিকে সংস্কার করে তোলার বিষয় নিয়ে পুরসভায় বৈঠকও হয়েছে। তবে দুর্গাপুরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা শ্মশানগুলিকে পুনরায় চালু করা নিয়ে বিজ্ঞান ও পরিবেশবিদদের তরফে আপত্তি তোলা হয়েছে। তাদের মতে গ্রামীণ এলাকার সাধারন শ্মশানগুলি ব্যবহার করলে চূড়ান্তভাবেই পরিবেশ দূষণ বাড়বে। তাদের মতে এলাকাভিত্তিক কয়েকটি শ্মশান বেছে নিয়ে সেখানে বৈদ্যুতিক চুল্লির ব্যবস্থা করলে ভালো। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরও বেহাল দশার শিকার। সাধারন মৃত্যুর সঙ্গে এখন কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় খুব স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেড়েছে দুর্গাপুরের একমাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লিযুক্ত বীরভানপুর শ্মশানেও। যেহেতু দুর্গাপুর মহকুমায় শবদাহের জন্য দ্বিতীয় কোনো বৈদ্যুতিক চুল্লি নেই তাই এখানেই দুর্গাপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাঁকুড়া জেলা থেকেও সৎকারের জন্য মৃতদেহ আনা হয়। এমনিতেই বাম আমলে তৈরী বীরভানপুর শ্মশানের দুটি বৈদ্যুতিক চুল্লির মধ্যে একটি দীর্ঘ দিন ধরেই অকেজো থাকায় একটি চুল্লির উপর চাপ পড়তে থাকে। বিশেষ করে কোভিড মৃতদেহ গুলিও এখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে আনা হতে থাকায় একটি চুল্লিই বেশী সময় ধরে চলতে থাকায় সেটিও এক সময় অকেজো হয়ে পরে। অবশেষে দুর্গাপুর পুরসভা বাধ্য হয়ে ৩০ লক্ষের বেশি টাকা খরচ করে শ্মশানের দুটি বৈদ্যুতিক চুল্লিই মেরামত করেছে। তাই এখন শবদাহে ব্যাঘাত হচ্ছে না ঠিকই কিন্তু, প্রতিনিয়ত যে হারে বীরভানপুর শ্মশানে শবদেহ আসার সংখ্যা বাড়ছে তাতে অবিলম্বে দুর্গাপুর মহকুমায় আরও একটি বৈদ্যুতিক চুল্লিযুক্ত শ্মশান তৈরীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতির কথা উপলব্ধি করে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা থেকে সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে কাঁকসার কুলডিহার কুনুর নদীর পাশে থাকা পুরোনো একটি শ্মশানকেই বৈদ্যুতিক চুল্লির সুবিধাযুক্ত করে সেটিকে আধুনিক করে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় শবদেহ নিয়ে আসা মৃতের পরিবারের লোকজনদের। ঝড় বৃষ্টির সময় সেই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কারন শ্মশানযাত্রীদের জন্য এখানে সেরকম কোনো আচ্ছাদন বা আশ্রয়ের জায়গা নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ঢেকে থাকা এই শ্মশানে আর দাহকাজ করা যায় না। এবার এখানেই তাই একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির আধুনিক শ্মশান গড়ে তুলতে চাইছে রাজ্য সরকার। বীরভানপুরের মতোই এই শ্মশানেও থাকবে বিশ্রামের ও বসার জন্য জায়গা, থাকবে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা। কিছুদিন আগেই বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার সহ এখানকার জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের ইঞ্জিনিয়াররা এবং কাঁকসা পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা। জানা গেছে এখানে প্রায় চার বিঘা জমি নিয়ে নতুন একটি বৈদ্যুতিক চুল্লিযুক্ত আধুনিক শ্মশান গড়ে তোলা হবে। বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন,এই উদ্যোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারী মহলে জানিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজ যাতে শুরু করা যায় তার জন্য তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে চলেছেন।