এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।
ডেটলাইন দুর্গাপুরঃ ১৮ মানেই অনেক কিছু করার বয়স। দেশ ও দশের জন্য ভাবার বয়স। ভারতীয় গণতন্ত্রে এই বয়সেই মেলে ভোটদানের অধিকার। সমাজের জন্য কিছু করার দৃঢ় মানসিকতাও দেখা যায় এই বয়সে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার লাইনেও সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে। আর সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতেই নিজেদের ১৮ তম জন্মদিনে স্বেচ্ছায় রক্তদান করে সামাজিক দায়বদ্ধতার বার্তা দিলেন এই শহরের দুই বোন আয়েষা ও তনুজা খাতুন। এদিন তাদের ১৮ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে এক স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল দুর্গাপুর আইটিআই সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয় হাউজিং সোসাইটির আমন্ত্রণ হলে। দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সহযোগিতায় মহতী এই রক্তদান শিবিরে এই দুই বোনসহ ২৮ জন তরুণ তরুণী স্বেচ্ছায় রক্তদান করলেন। কিভাবে এলো ১৮ এর জন্মদিন এভাবে পালনের ইচ্ছা? আসলে আয়েষা ও তনুজার বাবা শহরের সুপরিচিত আইনজীবী আয়ুব আনসারি নিজেও রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই জড়িয়ে আছেন। বাবাকে দেখেই দুই মেয়ের মনেও মহৎ এই কাজের প্রতি আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা জাগে। মানুষের জীবন বাঁচাতে একফোঁটা রক্তের যে অপরিসীম মূল্য আছে সেই উপলব্ধি থেকেই জন্মদিনকে এইভাবে উদযাপন করতে এগিয়ে আসে তারা। শুধু রক্তদানই নয়, একই সঙ্গে এদিন আয়েষা ও তনুজা দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থন জানিয়ে তাদের তহবিলে স্কুলের খরচ থেকে বাঁচিয়ে ৫ হাজার টাকা দান করলেন। বিধায়ক সন্তোষ দেব রায়ের হাতে সেই চেক তুলে দেয় তারা। তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিবিরে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। এই শিবিরে রক্তদান করেন দুর্গাপুর সাব ডিভিসনাল ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক সস্ত্রীক রাজেশ পালিত ও পূর্ণিমা পালিত, অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক পার্থ প্রতিম কুন্ডু,দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্লাব সমন্বয় সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য শুভম দাস ও প্রসেনজিৎ রায়। শিবিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার অর্গানাইজেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার সম্পাদক কবি ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল ব্লাড সেন্টারের ইনচার্জ ডাঃ করবী কুন্ডু,বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়, প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী, রক্তদান আন্দোলনের পূর্ব পশ্চিম বর্ধমান জেলার নেতৃত্বে থাকা অসীম সরকার,তপন মাহাতো, সোহেল, রাজ্য রক্তদান আন্দোলনের নেতা তুষার মুখার্জী সহ অন্যান্য অতিথিরা। আয়েষা ও তনুজার বাবা বিশিষ্ট আইনজীবী আয়ুব আনসারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওদের ইচ্ছা ছিল স্বেচ্ছায় রক্তদান করার। আজ সেটাই বাস্তবায়িত করল ওরা। জন্মদিন নিছক একটা অজুহাত আসলে এটাকে মানবতার জন্য উৎসর্গ করাই হল ওদের আসল লক্ষ্য। দুর্গাপুর মহকুমা ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের পক্ষে সহ সাধারণ সম্পাদিকা সুলতা দাস আয়েষা ও তনুজা সহ সকল রক্তদাতা ও সহযোগীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।