অক্ষয় তৃতীয়াতেই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়েছিল

0
1734

ডেটলাইন ওয়েব ডেস্কঃ বাংলা ও বাঙালী তথা হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছে একটি অত্যন্ত পবিত্র দিন হল অক্ষয় তৃতীয়া। সাধারনত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ বাঙালীর জীবনে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করলেও তার সপ্তাহ তিনেক পরেই আগত অক্ষয় তৃতীয়া নিয়েও বঙ্গজীবনে যথেষ্ঠ উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। যাঁরা বাংলা নববর্ষের দিনে হালখাতা করতে পারেন না বা করেন না, সেই সব ব্যবসায়ী বা দোকানদাররা এই পুণ্যদিনে হালখাতার শুভ অনুষ্ঠান করেন। শুধু হালখাতাই নয়,অক্ষয় তৃতীয়া দিনটি এক বিশেষ শুভদিন হিসেবেই বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। তাই শুধু হালখাতা নয় এই শুভদিনে গৃহারম্ভ, গৃহপ্রবেশ, মন্দির প্রতিষ্ঠা, ব্যবসা শুরু, ক্রয়, বিক্রয়, বৃক্ষরোপণ, দেবতা প্রতিষ্ঠা, শিল্পারম্ভ ও নানাধরনের উৎসবের আয়োজনও করা হয় অত্যন্ত শ্রদ্ধা, ভক্তি ও আনন্দের সঙ্গে। এমনকি বহুকাল ধরেই যাত্রা, নাটক ও সিনেমার শুভ মহারতের অনুষ্ঠানও এদিন পালিত হয়।

হিন্দুধর্ম মতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চন্দনযাত্রা, স্নানযাত্রা, রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, রাসযাত্রা নামে অনেকগুলি যাত্রার রীতি রয়েছে। তার মধ্যে এই অক্ষয় তৃতীয়াতে চন্দনযাত্রা অন্যতম মহোৎসবরূপে পরিগণিত হয়। শ্রীজগন্নাথক্ষেত্র পুরীতে একুশ দিন ব্যাপী চন্দনযাত্রা উৎসবের শুরু এদিন থেকেই হয়। নীলাচলে শ্রীজগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর বিশ্ববিখ্যাত রথের কাজ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই। দশমহাবিদ্যার অন্যতমা মহাদেবী ধূমাবতীর আবির্ভাব অক্ষয় তৃতীয়ায়। এই তিথিতেই উদ্ভূত হয়েছিলেন বিষ্ণুর দশ অবতারের অন্যতম ভৃগুপতি পরশুরাম। তাই এটি ‘পরশুরাম জয়ন্তী’ হিসাবেও খ্যাত।  চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি হল এই অক্ষয় তৃতীয়া। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। এই শুভদিনেই জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। বেদব্যাস ও গণেশও এই দিনে মহাভারত রচনা শুরু করেছিলেন। এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়েছিল। আবার এই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই রাজা ভগীরথ গঙ্গাদেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন। এদিনই কুবেরের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেছিলেন। তাই এদিনই কুবেরের লক্ষ্মীলাভ হয়েছিল বলে অক্ষয় তৃতীয়াতে বৈভব-লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। অক্ষয় কথার অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে, এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকাজ শুরু করা হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী-যমুনোত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল তা একইভাবে জ্বলছে। সমাজ পরিবর্তন হওয়ায় আমরা অনেক কিছু হয়তো আগের মতো মেনে চলতে পারিনা। তবু প্রাচীন রীতি মেনে আজও এই শুভ দিনে আমরা অনেকেই সোনার বা রূপার গহনা কিনে থাকি। মনে করা হয়, এই শুভ তিথিতে রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। সুখ-শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধি হবে। এই আশাতেই এদিন মানুষ কিছু না কিছু কিনে থাকেন পারিবারিক সুখ শান্তি ও মঙ্গলকামনায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here