ডেটলাইন দুর্গাপুরঃ দুর্গাপুরের খেলাধূলার ইতিহাসে ইস্পাত নগরীর লাল ময়দান এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিয়ে রয়েছে। এই শহরের খেলাধূলার সঙ্গে যারা জড়িত বিশেষ করে ফুটবলপ্রিয় মানুষদের কাছে এই ময়দান অনেক কিছু স্মৃতি বহন করে চলেছে। একটা সময় ছিল দুর্গাপুর নেহেরু স্টেডিয়ামের পাশাপাশি এই লাল ময়দানও গোটা শহরের ফুটবলপ্রেমীদের নিয়মিত গন্তব্য স্থান হয়ে উঠেছিল। এই ময়দানে অনুষ্ঠিত আশীষ জব্বর ফুটবল প্রতিযোগিতা ছিল শহরের খেলাধূলার ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয় এক প্রতিযোগিতা। এই শহর এবং শহরের বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে এই ময়দানে খেলতে দেখা গেছে। এই ময়দানে খেলা দুর্গাপুরের একাধিক ফুটবলার পরবর্তী সময়ে জেলা ও রাজ্য স্তরেও খেলার সুযোগ পেয়েছে। অনেকেই কলকাতার বড় দলগুলিতেও খেলেছে। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুরে খেলাধূলার চর্চায় ভাটা আসে। একসময় লাল ময়দানের জনপ্রিয় ফুটবল প্রতিযোগিতাও বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বাম শ্রমিক সংগঠন ‘হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’। ১৯৬৬ সালের ৫ আগষ্ট হিন্দুস্থান স্টীল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের ডাকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে প্রহরী ও পুলিশের আক্রমনে অন্য অনেকের সাথে গুরুতর আহত হওয়া আবদুল জব্বার মারা যান মধ্য রাত্রে অর্থাৎ ৬ আগষ্ট ১৯৬৬। ওই দিনেই সকালে স্থানীয় জি সেক্টর মার্কেটে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইউনিয়নের অন্যতম সহ সম্পাদক আশিস দাশগুপ্ত। বাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আশীষ ও জব্বর নামে দুই যুবক শহীদ হয়েছিলেন। তাই তাদের স্মৃতিতেই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে জ্যোতি বসুর জন্মদিনেই লাল ময়দানে এই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর ৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিনেই এই প্রতিযোগিতার সূচনা হয়ে থাকে। এবছরও ওই দিনেই প্রতিযোগিতা শুরু হবে বলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। ফুটবল প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ৫ ও ৬ জুলাই বিদ্যাসাগর শিশু সহায়তা কেন্দ্রের তরফে দুইদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবও অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবে গান,নাটক এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে এবং এটি অনুষ্ঠিত হবে সিটি সেন্টারের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, “খেলাধুলা ও সামাজিক ঐক্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উংসবের মূল উদ্দেশ্য”।
