ডেটলাইন নিউজ ডেস্কঃ করোনা ভাইরাস মানুষের শুধু জীবন জীবিকাই কেড়ে নেয়নি,সেই সঙ্গে আমাদের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দটাও প্রায় শেষ করে দিয়েছে। তাই উৎসব আনন্দেও কোপ পড়েছে। বাংলা তথা বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো এবার হবে কিনা তা নিয়ে তৈরী হয়েছিল এক গভীর অনিশ্চয়তা। শেষ পর্যন্ত করোনাকে সঙ্গে নিয়েই সাবধানতা অবলম্বন করেই ছাড় মিলেছে পুজো আয়োজনের। প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য সার্বজনীন পুজো কমিটিগুলিকে এবার ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘোষণায় অনেকটাই উৎসাহিত হয়েছে পুজো আয়োজকরা। একই সঙ্গে সাধারন মানুষের সংশয় কেটেছে পুজো নিয়ে। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেখা যাচ্ছে বাজারগুলিতে কেনাকাটার জন্য ভিড় জমছে। তবে এখানেই উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। কারন,আনন্দের আতিসহ্যে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ হচ্ছে প্রায় সর্বত্র। এরপর পুজোর সময় কি অবস্থা হবে তা নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। রাজ্য সরকার ও পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যেই পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে কড়াভাবেই কিছু গাইডলাইন মেনে পুজোর আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে। এবার কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষেও বেশ কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ছোটদের এবং বয়স্কদের দুর্গা পুজোর আনন্দ এবার মাটি হতে পারে। বলা হয়েছে,শিশু ও বয়ষ্করা যেন বাইরে ভিড়ের মধ্যে না বেরোয়। অন্তঃসত্ত্বাদেরও বাড়িতে থাকারই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি,যাদের শরীরে অন্য কোন রোগ রয়েছে, সেই সব ব্যক্তিদেরও ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। উৎসবের মরশুমে করোনার সংক্রমণ রোখাই কেন্দ্রের কাছে চ্যালেঞ্জ। সেই মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পুজো, প্রদর্শনী, মেলা, সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরাসরি বাধা না দিলেও জারি হয়েছে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ। কন্টেইনমেন্ট জোনে কোনওভাবেই চলবে না কোনও পুজো-পার্বণ। সেখানকার বাসিন্দাদেরও এলাকার বাইরে না বেরনোয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অংশ নিতে বারণ করা হয়েছে পুজোয়। সুস্থদেরও বাড়িতেই উৎসব পালন করার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, সাবধানতাই সবার আগে। তাই মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, পরষ্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিষয়গুলি অভ্যাসে পরিণত করতে হবেই, তার সঙ্গে উৎসবের এই মরশুমে ১০ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে বসে টিভি বা অনলাইনেই পুজো দেখার পরামর্শ দিয়েছে মোদি সরকার। করোনার ভাইরাস ‘সার্স কোভ-টু’ মারাত্মক সংক্রামক। তাই পুজো আয়োজকরা যাতে ভিড় এড়াতে পারে, তার দিকে কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্র। সবাই যাতে মাস্ক পরেন এবং প্যান্ডেলে যাতে একজোট হয়ে হল্লা না হয়,তার জন্য সিসিটিভি লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মণ্ডপের প্রবেশ পথে থার্মাল গান, অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা তো রাখতেই হবে এবং প্রবেশ-প্রস্থানের পথও হতে হবে পৃথক। প্যান্ডেলে রাখতে হবে ক্রস ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। প্রতিমা দর্শন বা রামলীলা দেখতে গিয়ে কারও মধ্যে যদি করোনা ভাইরাসের সামান্যমাত্র উপসর্গ ধরা পড়ে, তাহলে সেই ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের থেকে পৃথক করতে হবে। সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে আলাদা জায়গায়। সেই মতো পুজো প্যান্ডেল, মেলা, প্রশর্দনীতে আগেভাগেই আয়োজকদের আইসোলেশন রুমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সভা বা বিসর্জনের শোভাযাত্রার ক্ষেত্রে বন্দোবস্ত রাখতে হবে অ্যাম্বুলেন্সের তার জন্য আগেই সতর্ক করে রাখতে হবে হাসপাতালকে। যাতে কেউ অসুস্থ হলেই সময় নষ্ট না করে ভর্তি করে দেওয়া যায়। কিন্তু, এটা কি শুধু সরকারেরই চ্যালেঞ্জ? আমাদেরও তো করোনার সংক্রমন রুখতে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।