অঙ্গদানের লড়াইয়ে মধুস্মিতাই হোক অনুপ্রেরণা

0
1037

ডেটলাইন ওয়েব ডেস্কঃ দুর্গাপুরের মধুস্মিতা বায়েনের দুটি কিডনি পেলেন দমদমের অভিষেক মিশ্র(২০) ও নদিয়ার মিঠুন দালাল(২৩)। আর লিভার পেলেন বারাকপুরের সঞ্জিত বালা(৪৫)। তাঁর কর্ণিয়া ২টিও শিঘ্রই প্রতিস্থাপিত হবে দুজনের চোখে। এদের মধ্যেই বেঁচে থাকবে মধুস্মিতা। অঙ্গদান ও তা প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে যেন এরাজ্যে অভূতপূর্ব উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার জন্য পরপর কয়েকটি ঘটনাকে উল্লেখ করতেই হয়। পূর্ব ভারতে প্রথম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করে ইতিহাস গড়েছেন কলকাতার চিকিৎসকরাই। মাস ছয়েক আগে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা দিলচাঁদ সিংয়ের শরীরে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয় কলকাতারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন তিনি। তারপর গত শুক্রবার দিলচাঁদের মতোই রানীগঞ্জের রাখাল দাসের শরীরে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করেছেন কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাজ্যের কোন সরকারী হাসপাতালে এটাই প্রথম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের নজির। ঘটনা হল,এসএসকেএমে ভর্তি থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুজালির বাসিন্দা সৈকত লাট্টুর ব্রেন টিউমার হয়েছিল। শুক্রবার রাতে তাঁর ব্রেন ডেথ হয়। তখনই ঐ যুবকের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেয় এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের সম্মতির পরেই গ্রিন করিডর তৈরি করে এসএসকেএম থেকে হৃদযন্ত্র আনা হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছিল তিনজন রোগিকে। তাদের মধ্যে রানীগঞ্জের রাখাল দাসের সঙ্গে পুজালির সৈকত লাট্টুর হৃদযন্ত্রের মিল পাওয়া যায়। শনিবার রাখাল দাসের শরীরে সফলভাবেই হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করেন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। এই ঘটনার পরেই আরও এক ইতিহাস গড়ল দুর্গাপুর। যেখানে ১৩ বছরের মেয়ে ব্রেন ডেথ হওয়া মধুস্মিতার কিডনি,লিভার,কর্ণিয়ার মতো অঙ্গ কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৭০ কিলোমিটার গ্রিন করিডর করা হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং পশ্চিম বর্ধমান,পূর্ব বর্ধমান,হাওড়া ও হুগলি চার জেলার পুলিশের অসাধারন সক্রিয়তায় যা সফল হয়েছে। এর আগে আকাশপথে ভিন রাজ্য থেকে অঙ্গ নিয়ে আসা হলেও সড়কপথে এত দীর্ঘ পথ ধরে অঙ্গ নিয়ে আসার ঘটনা এটাই প্রথম। এটা অবশ্যই এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারন,শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার পর পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত ঠিক থাকে লিভার। আর কিডনি ঠিক থাকে আট থেকে দশ ঘণ্টা। তারমধ্যেই এগুলি গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপিত করতে হয়। তাই মধুস্মিতার ঘটনায় শুধু রাজ্যেই নয়,গোটা দেশেই অঙ্গদানের লড়াই যে এক বিশেষ মাত্রা পাবে তা বলাই বাহুল্য। গভীর শোকের মধ্যেও মেয়ের অঙ্গদানের মত সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে মধুস্মিতার বাবা-মা দিলীপ বায়েন ও অর্চনাদেবীও গোটা দেশে অঙ্গদানের লড়াইকে নিঃসন্দেহেই এক ধাক্কায় অনেকটাই গতিশীল করে তুললেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here