ডেটলাইন দুর্গাপুরঃ ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ও বিধাননগর থেকে মুচিপাড়া অবধি রাস্তা জুড়ে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। ভাবছেন কি ঘটনা ঘটল? তবে দুর্গাপুরের ক্ষেত্রে অবশ্যই এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হল আজ। এই প্রথম জেলা থেকে প্রতিস্থাপনের জন্য মানবঅঙ্গ পাঠানো হল কলকাতায়।
তার জন্যই দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল থেকে এসএএসকেএম পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সবরকম ব্যবস্থা করে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট। আসানসোল -দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (ট্রাফিক) শাশ্বতী শ্বেতা সামন্ত জানিয়েছেন,তিনটি ট্রাফিক গার্ডের সমস্ত কর্মী, ডিসি(পূর্ব), এসিপি ও ৪টি থানার অফিসার ইনচার্জ সহ প্রায় ৫০০ পুলিশকর্মী গ্রিন করিডরে মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা হল,গত ১৬ নভেম্বর দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে এক নাবালিকার ব্রেন ডেথ হয়। মৃতের নাম মধুস্মিতা বায়েন (১৩)। মধুস্মিতার বাবা দিলীপ বায়েন আসামের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি বাঁকুড়ায় থাকেন এবং মেজিয়া থার্মাল পাওয়ারে সিআইএসএফ-র পদে চাকরী করেন। তাঁদের ১৩ বছরের মেয়ে মধুস্মিতা জন্ম থেকেই স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত। তাকে সুস্থ করতে দক্ষিণ ভারতসহ কয়েকটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলেও কোন লাভ হয়নি। গত ১২ তারিখ রাতে হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাঁকুড়ার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে নাবালিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মিশন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত শনিবার বিকেলে সেখানেই মধুস্মিতার ব্রেন ডেথ হয়। মধুস্মিতার মৃত্যু হলেও তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালই আছে। তাই দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন মেয়ের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার। অন্যদের মধ্যে মেয়েকে তারা বাঁচিয়ে রাখতে চান। সম্মতি পেয়ে মিশন হাসপাতালের তরফে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মিশনে ব্রেন ডেথ কমিটি না থাকায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজকে কমিটি গড়ে পাঠাতে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ডাঃ ব্রজেন চৌধুরি, ডাঃ অনিরুদ্ধ রুদ্র, ডাঃ দত্তা রায় ও ডাঃ কে পি মণ্ডলকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির মাধ্যমেই দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যভবন ও এসএসকএএম হাসপাতালের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন করে গোটা বিষয়টি পরিচালনা করা হয়। মিশন হাসপাতালে অপারেশনের পরই মধুস্মিতার দেহের ভালো থাকা ২টি কিডনি,২টি কর্ণিয়া ও লিভার নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএমে।