ডেটলাইন ওয়েব ডেস্কঃ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশগুলি দূষণ সৃষ্টিকারী প্লাস্টিক বর্জনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। কারন বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলদূষণের জন্য অনেকটাই দায়ী হল এই প্লাস্টিক। তা রোধ করতে তৎপর ভূমিকা নিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সম্মেলনে চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁদের দেশের সমুদ্রসীমা প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। এক গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে সমুদ্রের তলদেশে ৫ ট্রিলিয়ান প্লাস্টিকের টুকরা রয়েছে। যাতে সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি প্লাস্টিকজনিত বিভিন্ন রোগের মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে প্রবেশ করে। এসব প্লাস্টিকের একটি বড় অংশ প্রবেশ করে মাছ এবং পাখিদের দেহে। এমনকি সমুদ্রের তলদেশেও প্রাণীর শরীরে প্লাস্টিকের টুকরো পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব দেশে অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন ঘটেছে কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হয়নি সেখানে এই সমস্যা প্রকট। সমুদ্রের পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণের শিকার হচ্ছে নদীও। জানা গেছে,এশিয়ার ৭৮ শতাংশ নদীতে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক সীমার ওপরে। এসব নদীতে যদি প্লাস্টিকের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমানো যায়, তবে সারা বিশ্বে প্লাস্টিক দূষণ ৩৭ শতাংশ কমবে। আমাদের দেশেও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। তথাপি এখনও বহু জায়গায় এর ব্যবহার চলছে। ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকের বর্জ্য প্রতিনিয়ত নিকাশি নালার মাধ্যমে জলাভূমিতে গিয়ে পড়ছে। মাছ সেসব খাচ্ছে, আর মাছের মাধ্যমে তা মানুষের ফুড-চেইনে ঢুকে পড়ছে। ভয়াবহ পরিবেশ দূষক হিসেবে প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে পরিবেশ ঝুঁকিও দিন দিন বাড়ছে, জীববৈচিত্র্যকে করে তুলছে বিপন্ন। পলিথিন মূলত এক ধরনের প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের মূল উপাদান পলিপ্রোপাইলিন জাতীয় অপচনশীল পদার্থের তৈরি পলিথিন ব্যাগ বা যে কোনো পণ্য বা মোড়ক পরিবেশের জন্য সমান ক্ষতিকর। পলিব্যাগের মতো সম্পূর্ণ অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার শেষে যত্রতত্র ফেলার কারণে রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা, নদী-খালে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকে। কালক্রমে জমাকৃত প্লাস্টিক বর্জ্য ও পলিথিন ব্যাগ নিকাশি নালায় লাইনে আটকে গিয়ে তরল বর্জ্য প্রবাহ বন্ধ করে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ড্রেন উপচানো বর্জ্য-মেশানো দূষিত জল রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। খাল-নদীতে পলিব্যাগের স্তর জমে জলপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটায় এবং মারাত্মক জল দূষণের সৃষ্টি হয়। পলিথিন তৈরি কাঁচামাল পলি-ইথাইলিন ও পলি-প্রোপাইলিন ১২০ থেকে ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গলনাঙ্কে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং কার্বন-মনোক্সাইড গ্যাস ছড়িয়ে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে। পলিথিন ব্যাগের মতো পলিথিন জাতীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অপচনশীল প্যাকেট ও মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষিপ্ত হচ্ছে এবং মাটি, জল ও বাতাসকে দূষিত করাসহ পরিবেশ-দুষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।