পঞ্চায়েতি ব্যবস্থাই পারে দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে

0
4077

চম্পা মুন্সিঃ আধুনিক ‘পঞ্চায়েতি রাজ’ শাসনব্যবস্থা মহাত্মা গান্ধীর মস্তিষ্ক প্রসূত এক ধারণা। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠুক গ্রামকে কেন্দ্র করে। স্বাধীনতার পরে মূলত তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেই ভারতে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এর পরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ব্যবস্থাকে আধুনিক যুগের উপযোগী ও আরও বেশি কার্যকরী করে তোলার জন্য ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন  সরকারি পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সুফল পাওয়া গেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সেরার জায়গা দখল করতে পেরেছে। ৭০ দশকে বামফ্রন্ট সরকারের রাজত্বকালে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার যথেষ্ঠ উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই মনে করেন বামফ্রন্ট সরকারের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সাফল্যের নেপথ্যে পঞ্চায়েত সংস্কার ও এই ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত সুফলগুলি অনেকাংশে দায়ী।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে কেন এই ভোটকে পঞ্চায়েত ভোট বলা হয়। আসলে ‘পঞ্চায়েত’ শব্দটির উৎপত্তি পঞ্চ বা পাঁচ থেকে। প্রাচীন ভারতে পাঁচজন সদস্য নিয়ে যে স্বশাসিত স্বনির্ভর গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হত, তাকেই বলা হত পঞ্চায়েত। আধুনিককালে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয় এক সমষ্টিগত চেতনা। ‘পঞ্চায়েত’ শব্দটির সাধারন অর্থ ‘পাঁচ জনের জন্য’। অর্থাৎ যে ব্যবস্থা সমাজের সাধারন মানুষদের জন্য। সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর বর্তমানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা  ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় স্তরের সরকার  হিসেবে স্বীকৃত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য জুড়ে যে উন্নয়নের কাজ চলছে তাতে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। বিশেষ করে ১০০ দিনের কাজে এই সরকার সারা দেশে নজীর গড়েছে। এছাড়াও পরিবেশ সুরক্ষায় শৌচাগার নির্মানেও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চল অন্য অনেক রাজ্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। এসব কারনেই কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকেও পশ্চিমবঙ্গ পুরস্কার লাভ করেছে।

১৯৫৭  সালে সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত আইন বিধিবদ্ধ হয়। ১৯৫৭ ও  ১৯৬৩ সালের আইন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে নতুন আইনের মাধ্যমে চালু হয় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৭২তম সংশোধনী অনুসারে  ১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত আইনটিকেও পুনরায় সংশোধিত করা হয়। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত বলবন্তরাই মেহতা কমিটির  সুপারিশক্রমে ভারতের সব রাজ্যেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গে ১৯১৯ সাল থেকে প্রচলিত ইউনিয়ন বোর্ডকে বাদ দিয়ে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করা সম্ভবপর ছিল না। সেই কারণে এ রাজ্যে চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৫৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল পঞ্চায়েত অ্যাক্টের মাধ্যমে চালু হয় দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় গ্রাম স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরনো ইউনিয়ন বোর্ড স্তরে অঞ্চল পঞ্চায়েত গঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে এই আইন অনুসারে প্রথম নির্বাচন হয়।

 

ত্রিস্তর পঞ্চায়েত কি?

গ্রাম পঞ্চায়েতঃ মোট তিনটি স্তরে বিন্যাস করা হয়েছে এই শাসন ব্যবস্থা। যার প্রথম স্তরে রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন করার জন্য  রাজ্য সরকার কোনও একটি মৌজা, বা তার অংশবিশেষ, বা তার সংলগ্ন একাধিক মৌজা, বা তার অংশবিশেষকে ‘গ্রাম’ ঘোষণা করে থাকে। প্রত্যেক গ্রামের নামে গ্রাম পঞ্চায়েতের নামকরণ হয়ে থাকে।

পঞ্চায়েত সমিতিঃ ১৯৭৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন অনুসারে পঞ্চায়েত সমিতি  হল পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার দ্বিতীয় বা মধ্যবর্তী স্তর। এই স্তর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক স্তরে গঠিত। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্লকের নামানুসারে প্রত্যেক ব্লকে একটি করে পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করেছে।

জেলা পরিষদঃ  জেলা পরিষদ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তৃতীয় তথা সর্বোচ্চ স্তর। জেলা পরিষদের নামকরণ করা হয় সংশ্লিষ্ট জেলার নামানুসারে। কলকাতা ও দার্জিলিং জেলা বাদে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় জেলা পরিষদ বর্তমান। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় জেলা পরিষদের সমক্ষমতা ও মর্যাদা সম্পন্ন একটি মহকুমা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত আছে। আসলে গ্রামই হল সমাজজীবনের মূল ভিত্তি। গ্রামের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের এতো গুরুত্ব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here